প্রকাশিত:
২৯ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ২১:৩০
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির বাড়ি। শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক হওয়ায় এক সময় গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক টাকা ব্যয় করে মাটির বাড়ি তৈরি করতেন। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের এ আধুনিকতায় মাটির বাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
সময়ের সাথে মাটির বাড়ির প্রচলন হারিয়ে গেলেও আজও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৩৩ বছর আগে তৈরি করা নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে ১০৮ কক্ষের মাটির তৈরি বিশাল বাড়িটি।
বিশাল এই বাড়িটি নির্মাণ করেন দুই সহোদর- সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল। ৩৩ বছর আগে ৩ বিঘা জমির উপর মাটির এই দোতলা বাড়িটি নির্মান করেছিলেন তারা। বিশাল এই বাড়িটির দৈর্ঘ্য ৩০০ ফিট এবং প্রস্থ ১০০ ফিট।
বাড়িটি নিয়ে চেরাগপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী শবিনাথ মিত্র বলেন, " ১৯৮৬ সালে বাড়িটি তৈরি করা হয়। এটা দেখতে অনেকটা রাজ প্রাসাদের মতো। এই কারণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে র্পযটকরা আসেন বাড়িটি দেখতে। সরকারি ভাবে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে এই বাড়িটি একটি পর্যটন স্থান হতে পারে"।
এরপর কথা হয় বাড়িটির মালিক মৃত তাহের আলী মন্ডলের ছেলে মাসুদ রানার সাথে। বাড়িটি বানানোর সময়কার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার বাবা ও চাচা দুই জনই সৌখিন লোক ছিলেন। তারা দুই জন মিলে ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়িটি বানিয়ে ছিলেন।
আজ তারা কেউ বেঁচে নেই। আমাদের এই বাড়িটি তৈরী করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। বাড়িসহ আশেপাশের মোট ২১ বিঘা জমি রয়েছে। আর ওই বাড়িটি তৈরি করতে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছিল। বাড়িটি তৈরি করতে সে সময় শতাধিক শ্রমিক লেগেছিল"।
"প্রতিদিন দুর-দূরান্ত থেকে আমাদের এ বাড়িটি দেখার জন্য লোকের সমাগম ঘটে। বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়েছে", যোগ করেন তিনি।
নাটোর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সাব্বির হোসেন তিনি বলেন, "লোক মুখে শুনে ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়িটি দেখতে এসেছি। নতুন প্রজন্মরা জানেই না মাটির দোতলা বাড়ি তৈরী করা যায়। তাই সন্তানদের নিয়ে এসেছি এই মাটির বাড়িটি দেখানোর জন্য। এখানে না আসলে জানতামই না যে মাটি দিয়ে এত সুন্দর বাড়ি তৈরি করা যায়"।
মাসুদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, পায়ে হেঁটে একবার বাড়ির চার ধারে ঘুরে আসতে সময় লাগে ৭-৮ মিনিট। ১০৮ কক্ষের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা ৭টি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় উঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৮টি। ৯৬টি বড় ও ১২টি ছোট কক্ষ রয়েছে বাড়িতে।
মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন (পারভেজ) বলেন, "চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে ১০৮ কক্ষের বাড়িটি আমার জানা মতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মাটির বাড়ি। বাড়িটি যাতে সঠিক ভাবে রক্ষানাবেক্ষণ করা হয় সেই জন্য বাড়িটিতে যারা অবস্থান করেন, তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। পর্যটকরা বাড়িটি দেখতে এসে রাতে থাকতে চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে ডাক বাংলার ব্যবস্থা করে দেই"।
ইতোমধ্যে পর্যটকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বাড়িটিকে ঘিরে অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রিয় নওগাঁ/এফএস
মন্তব্য করুন: