priyonaogaon@gmail.com রবিবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩০

ঘুরে আসুন নওগাঁর আলতাদিঘি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ২২:২৫

সংগৃহিত

সুবিশাল অরণ্য, সুবিস্তৃত দিঘির উত্তর পাড়ে তারকাঁটায় ঘেরা ভারতের সীমান্ত। বনের ভেতরে আঁকা-বাঁকা পথের মাঝে উই পোঁকার ঢিবি। বাহারি জংলি গাছের লতাপাতায় মোড়ানো শাল গাছ। ঘন জঙ্গলের ভেতর মেঘেরা হারিয়ে যায় অগুনতি শাল গাছের আড়ালে। যেন হঠাৎ করে নেমে আসে অন্ধকার। সে আলো-ছায়ার মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু থেকে প্রবীণরা।

বলছিলাম শালবনে ঘেরা নওগাঁর আলতাদিঘি উদ্যানের কথা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে ভ্যান অথবা ইজিবাইকে করে উত্তরে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরেই আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানে দেখা মেলে এমন দৃশ্য। তাই তো দিঘি আর বুনো সৌন্দর্যের টানে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।


মাসখানেক আগের ঘটনা। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে এসেছিলেন সাকিলা। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার আড়ানগর ইউনিয়নে। আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানের একদম কাছেই। তখন তার ঢাকায় ফেরার পালা। মনটা খারাপ থাকায় ঠিক করলেন পরিবারের সদস্যরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাবেন।

আলতাদিঘি কাছে থাকায় সবাই ঠিক করলেন সেখানেই যাবেন। তানিয়া, মরিয়ম, আতিয়া, সাকিলা ও তাদের নানা-নানি ঘুরতে যাওয়ার জন্য মন স্থির করলেন। যাওয়া-আসা মিলে ৫০০ টাকায় একটি ইজিবাইক ঠিক করলেন। চল্লিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেন গান-গল্প আর আড্ডায়।


শালবনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সাকিলার পায়ে আনন্দের মর্মর সুর তুলল শুকনো পাতার দল। নির্জন বনে চেনা-অচেনা পাখির সুরে ফুরফুরে হয়ে উঠছে তার মন। পায়ে হাঁটা পুরোটা পথে তার নতুন সঙ্গী ছিল শান্ত আলতাদিঘির জল। তবে পথ হাঁটতে হাঁটতে একসময় থেমে যেতে হবে কাঁটাতারের বেড়ার প্রান্তে। কারণ ওপারে ভিন্ন দেশ।

৪৩ একর আয়তনের বিশাল আলতাদিঘির স্বচ্ছ পানিতে ফুটে উঠেছে পদ্মফুল। যা যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে করে উচ্ছ্বসিত। আরও চোখে পড়বে নাম না জানা অসংখ্য ফুল। যার ঘ্রাণে সুবাসিত চারদিক। এদিকে অচেনা পাখি আর কোকিলের ডাকে মনে হবে বসন্ত এসে গেছে। তবে প্রতিবছর শীতে পরিযায়ী পাখিরা এসে ভিড় জমায় সীমান্ত ঘেঁষা এ দিঘির পানিতে। ডাহুক, পানকৌড়ির কলকাকলির ধ্বনি ভেসে বেড়ায় শালবনজুড়ে।


দিঘির পাড় ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে সারি সারি শাল গাছ। এ গাছের ওপর বানর ছানারা খেলা করে বেড়ায়। শুকনো শাল পাতাকে আলিঙ্গন করে গড়ে উঠেছে উঁইপোকার বড় বড় ঢিবি, যা সত্যিই বিস্ময়কর। তবে রাতের আঁধারকে আলোকিত করে চাঁদের আলোয় শেয়াল, বেজি আর বনবিড়ালের আনাগোনায় নতুন রূপে ফুটে ওঠে রাতের আলতাদিঘি।


ঘোরাঘুরি আর আড্ডায় বাড়ি যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। সাকিলার মন বলছে আরেকটু থাকতে। তবে কাল তার ঢাকা ফিরতে হবে। ব্যাগ গোছানো এখনো বাকি। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মনের সঙ্গে অনেকটা জোর করে ইজিবাইকে ফিরে চলল বাড়ির দিকে। তবে তার ভালো লাগছে এই ভেবে সুন্দর একটি স্মৃতি নিয়ে কাল ঢাকায় ফিরবে।


প্রিয় নওগাঁ/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর