প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ২২:০৭
শত বছরের ইতিহাস মাথায় নিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থাপনা কাশিমপুর রাজবাড়ি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর তীরে ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে অবস্থিত এই রাজবাড়িটি। মৃত প্রায় রাজবাড়ির নির্মাণ শৈলী, নকশা ও ডিজাইন এখনও দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়।
এ অঞ্চলে কবে রাজার শাসন প্রবর্তন শুরু হয়েছিলো তা জানা যায়নি। শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭সালে দেশ ভাগের পর রাজবংশের সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান।
শুধুমাত্র ছোট রাজা শ্রী শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই এই রাজবাড়িতে বসবাস করেছিলেন। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি ও তার পরিবার এই রাজবাড়ির স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান। রাজবাড়ির এলাকা ছিলো ২একর ১৯ শতক জমি নিয়ে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়িটির নিদর্শন সমূহ দীর্ঘদিন যাবত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সকল কারুকার্য আজ প্রায় ধ্বংসের পথে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাজবাড়ির মূল ভবনের মাঝখানে শুধুমাত্র দুর্গা মন্দিরের সামনের চারটি গম্বুজসহ কিছু অংশ ক্ষতবিক্ষত প্রাচীর ও দেয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর দিক দিয়ে রাজবাড়িতে প্রবেশ করার পথেই রয়েছে শিব, রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল মন্দির। চুন, সুড়কি ও পোড়া মাটির ইট দিয়ে তৈরি করা হয় এ মন্দিরগুলো।
বর্তমানে রাজার জায়গার কিছু অংশ এখন কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজবাড়ির শত শত বিঘার সকল জায়গার সবটুকুই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে তৈরি করেছেন নামে বেনামে অসংখ্য ধানের চাতাল। ফলে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখনো আশেপাশের অনেক দর্শনার্থীরা রাজবাড়িটির শেষ স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখতে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, রাজবাড়িরটি সংস্কার করলে আমদের উপজেলা ও আশেপাশের মানুষরা পেতে পারেন একটি বিনোদন কেন্দ্র আর সরকারও পেতে পারেন রাজস্ব। তাই এই রাজবাড়িটিকে ঘিরে এখানে একটি বিনোদন ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
রাজবাড়ির মন্দিরে বসবাসরত মালা রানী বলেন, আমরা ছিন্নমূল মানুষ। তাই দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে এই মন্দিরে এসে বসবাস করছি। আমরা এখানে বসবাস করছি বলেই আজোও রাজবাড়ির কিছু ঐতিহ্যবাহী এই নিদর্শনগুলো বেঁচে আছে। তা না হলে এগুলোও বেদখল করে নষ্ট করে ফেলা হতো।
২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, দেশ স্বাধীনের পর রাজার বংশধররা কয়েক দফায় এই রাজত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা রাজার এই বিশাল সম্পত্তি পেশীবলের জোরে দখলে করে নেয়।
এমনকি বড় বড় দালানকোটা ঘেড়া প্রাচীর ও রাজার প্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্যে দিবালোকে ও রাতের আঁধারে স্থানীয়রা লুটপাট করে বিক্রয় করেছে। দিন যতই যাচ্ছে এই রাজবাড়ির স্মৃতিচিহ্নগুলো ততই হারিয়ে যাচ্ছে। শতবছরের এই রাজবাড়ির ইতিহাসকে সংরক্ষন করার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহলের কার্যকরী পদক্ষেপ খুবই জরুরি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই রাজবাড়ির অবশিষ্ট অংশগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করে একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
প্রিয় নওগাঁ/এফএস
মন্তব্য করুন: