প্রকাশিত:
৩ অক্টোবার ২০২৩, ১৬:৩৪
গ্রামীণ টেলিকমের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠির মাধ্যমে অভিযুক্তদের তলব করা হয়েছে। এই চিঠির একটি কপি মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) হাতে পেয়েছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। খবর প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্যদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শোনা ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে আগামী ৫ অক্টোবর সকালে দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সহযোগিতা করার জন আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পাঁচ পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস. এম. হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
অন্য আসামিরা হলেন অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান এবং শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।
এর আগে গত ৩০ মে গ্রামীন টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করে।
১৯৯৫ সালে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি হিসাবে যৌথ মূলধন কোম্পানিতে নিবন্ধিত হয়। গ্রামীণ ফোনে গ্রামীণ টেলিকমের ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। একই সালের ১১ নভেম্বর গ্রামীণ ফোন আইপিওতে আসে এবং গ্রামীণ ফোনের পাবলিক শেয়ার ১০ শতাংশ হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিক কর্মচারীদের প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রামীণ টেলিকম নিজেদের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দাবি করে শ্রমিক কর্মচারীদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণের কোনো নিয়মনীতি নাই। কোনো নিয়মনীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠানটি মনে করেনি কিংবা অনুভব করেনি।
তবে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠানটির ১০৮তম সভা (ভার্চুয়ালি) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ওর্য়াকার্স প্রফিট পার্টিচিপেশন ফান্ডের পাওনাদি পরিশোধ করতে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা প্রয়োজন এবং এর পাওনা ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬০১ টাকা উক্ত ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তরিত হবে।
গ্রামীণ টেলিকম শিরোনামে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটি হিসাব খোলা এবং সিগনেটারী প্যানেলের গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম ও তার স্বাক্ষরকে বাধ্যতামূলক রেখে এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি বা সেক্রেটারী যেকোনো একজনসহ কমপক্ষে দুজনের যৌথ স্বাক্ষরে হিসাবটি পরিচালনা করা যেতে পারে মর্মে উক্ত বোর্ডে অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২২ সালে ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওর্য়াকার্স প্রফিট পার্টিচিপেশন ফান্ডের অর্থ পরিশোধের জন্য ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখা ও ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেডরে মিরপুর শাখার দুটি হিসাবে ৪৩৭ কেটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে। এই দুটি হিসাব থেকে ১৫৬ জন কর্মচারীকে ৩৬৪ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮২ টাকা ২০২২ সালে ২৫ মে থেকে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সময়ে বিতরণ করা হয়েছে।
তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শ্রমিকদের লভ্যাংশ টাকা বিতরণের এক মাস আগেই তিনটি চেক মূলে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটিডেরে লোকাল অফিসের হিসাবে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে বিশাল অংকের এই টাকা ছাড় করতে শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার লিখিত বা মৌখিক সম্মতি ছাড়াই অর্থ স্থানান্তর করে সেখান থেকে সরাসরি অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণার আশ্রয়ে অ্যাডভোকেটসহ গ্রামীণ টেলিকমের বিভিন্ন পর্যায়ের সিবিএ নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে উক্ত অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে মর্মে প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
প্রিয় নওগাঁ/এফএস
মন্তব্য করুন: