প্রকাশিত:
৩০ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৬:২৫
বগুড়ার শেরপুরে শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের চারটি রাস্তার বেহাল অবস্থা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন এসব রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ২৩টি গ্রামের মানুষ।
সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ৫ দশমিক ৬৮ বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট এই ইউনিয়নের ২৩টি গ্রামে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের বসবাস। কৃষি, মৎস্য চাষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির খামারগড়ে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন তারা।
কিন্তু এই ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ী থেকে রাজবাড়ী, কানাইকান্দর স্কুল থেকে বাঘমারা ও রাজবাড়ী থেকে দড়িমুকুন্দ এলাকার চারটি সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। গ্রামগুলোর চারটি কাঁচা সড়কে বর্ষাকালে হাঁটু কাদা ও বছরের শুকনা মৌসুমে ধূলাবালির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে এখানকার জনজীবন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই চারটি সড়ক দিয়ে সাতটি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। এছাড়া এই চারটি সড়ক লাগোয়া বাঘমারা শান্তিনিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইকান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইকান্দর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কানাইকান্দর ঘোলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন এসব সড়কে। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যায়।
কয়েক গ্রামের হাজারের ওপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই চারটি বেহাল সড়কে রবিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রতিনিয়ত। কাদা সড়ক পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসতেকোমলমতি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানান কানাইকান্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ।
তথ্যমতে, বহু বছর ধরেই কাঁচাসড়ক চারটি পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। এই গ্রামগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরও বসবাস রয়েছে। আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকা সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েই চলতে হচ্ছে যাতায়াতকারীদের। জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য বারবার ধর্ণা দিয়েও সাড়া পাননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এই সড়ক সংলগ্ন হাতিগাড়া, রাজবাড়ী, খোট্টাপাড়া, প্যাংরাপাড়া, কদিমুকুন্দ, বাগমারা, কলনীপাড়া এলাকায় ছোটবড় প্রায় ৩০০ গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। পুকুর রয়েছে ৩০টির অধিক। মানুষ ও গরু-ছাগল অসুস্থ হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় খামারিদের।
রাস্তার বেহাল দশার কারণে জরুরী প্রাণিসেবা দিতে আসা উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও আসতে হয় কাদা পথ মাড়িয়ে। এ কারণে, অভিভাবক, শিক্ষক, খামারি ও স্থানীয়রা এই ৪ সড়ককে ‘শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের দুঃখ’ বলেও অভিহিত করেছেন।
ঘোলাগাড়ি গ্রামের খামারি রুহুল আমিন বলেন, ‘গরুর চিকিৎসা ওষুধ বা খড় কেনার প্রয়োজনে প্রায়ই শেরপুর উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর বাজারে যেতে হয়। আর সড়কগুলোর অবস্থা এমন যে ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্ট হয়। সবচেয়ে বিপত্তি বাঁধে গরু-ছাগল অসুস্থ হলে।’
কানাইকান্দর কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, ‘ছোটখাটো সমস্যায় আমরা কষ্ট করে এসে এখান থেকেই সেবা নিই; সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পরে বা কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সমস্যা দেখা দেয়। রোগীকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়াও সম্ভব হয় না। যার কারণে জীবন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হয় এই কয়েক গ্রামের মানুষের।’
১০ নং শাহ বন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সড়কগুলো পাকাকরণের জন্য ২০২২ সালেই আবেদন দিয়েছি এবং যোগাযোগ রাখছি। আশা করা যায় দ্রুত সময়র মধ্যে রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবে।’
শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘সড়কগুলো এলজিইডির আইডিভুক্ত আছে কিনা বলতে পারছি না। সড়কগুলো আইডিভুক্ত হয়ে থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। তা না হলে, উপজেলার অর্থায়নে কাজ করা হবে।’
প্রিয় নওগাঁ/এফএস
মন্তব্য করুন: